মায়ের গল্প - দশটি হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া বেস্ট সেলিং বই

PrintableColorPal
0

 


“আপনি কি কখনো ভেবেছেন, মা সম্পর্কে লেখা কত নানা রকমের গল্প আছে? আমি নিজে যখন এই বইগুলো পড়তে শুরু করি, মনে হয়েছিলো এক একটা বই যেন মা ও আমাদের জীবনের একেকটা অজানা গল্প খুলে দিচ্ছে। কেউ মায়ের কঠোরতা নিয়ে লিখেছে, কেউ আবার মায়ের অমলিন ভালোবাসা নিয়ে। কেউ তাদের সংগ্রামের কথা বলে, আবার কেউ মায়ের আত্মত্যাগের রূপকথা শোনায়।

এই দশটি বই আমাকে একদম অন্য চোখে মা কে দেখতে শিখিয়েছে। হয়তো আপনারও হয়! তাই ভাবলাম, আজ আপনাদের সঙ্গে এই বইগুলোর গল্পগুলো শেয়ার করি — যেগুলো পড়ে আপনি মা সম্পর্কে ভাববেন একটু অন্যরকম ভাবে।

১. The Joy Luck Club – অ্যামি ট্যান

কল্পনা করুন, আমেরিকার একজন লেখিকা অ্যামি ট্যান, যিনি ছোটবেলা থেকে চীনা মায়েদের গল্প শুনে বড় হয়েছেন। তার এই অভিজ্ঞতা থেকে জন্ম নিয়েছে The Joy Luck Club। বইটি প্রথম প্রকাশ পায় ১৯৮৯ সালে, আর সেখান থেকেই সে যেন এক বর্ণিল চীনা-মার্কিন সমাজের দরজা খুলে দেয়। চারজন চীনা মা আর তাদের চার মেয়ের গল্প, যারা ভিন্ন পরিবেশে বড় হয়েছেন। এই গল্প পড়তে গিয়ে পাঠকরা বুঝতে পারেন মা এবং মেয়ের মধ্যে কত গভীর এক সম্পর্ক থাকে—কখনো ভালোবাসা, কখনো কষ্ট আর কখনো চ্যালেঞ্জের।
বইটি এত জনপ্রিয় হয় যে অনেক বার পুনঃমুদ্রণ হয়েছে, এবং আজও বিশ্বের নানা ভাষায় অনূদিত হয়ে মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে যায়।

২. A Tree Grows in Brooklyn – বেটি স্মিথ

১৯৪৩ সালে প্রকাশিত এই বইটা আসলে একটা মেয়ের জীবনের গল্প, যারা নিউ ইয়র্কের ব্রুকলিন এলাকায় দারিদ্র্যের মধ্যেও অটল আশা নিয়ে বেড়ে ওঠে। লেখিকা বেটি স্মিথ তার নিজস্ব অভিজ্ঞতা থেকে গল্পগুলো সাজিয়েছেন। বইয়ের কেন্দ্রবিন্দুতে আছে সেই মায়ের ভালোবাসা, যা তার মেয়েকে কঠিন সময় পার হতে সাহায্য করে। অনেকেই এই বইকে পড়ে নিজেকে নতুন করে দেখতে পায়—যেন কঠিন জীবনের মধ্যেও এক গাছের মতো বেড়ে উঠার শক্তি মায়ের ভালোবাসার কাছ থেকে পাওয়া যায়।
স্কুলগুলোতেও এ বই পড়ানো হয়, কারণ এটা শুধু একটি পরিবারের গল্প নয়, বরং প্রত্যেকের জীবনের সংগ্রাম ও স্বপ্নের গল্প।

৩. Room – এমা ডোনোহু

একটা ছোট ঘর, এক মা আর তার ছেলের জীবন—এই বইটি পড়তে পড়তে মনে হয় আপনি যেন তাদের সঙ্গে সেই ঘরে আটকে রয়েছেন। এমা ডোনোহু ২০১০ সালে এই বইটি প্রকাশ করেন, যা পরে দারুণ একটি চলচ্চিত্রেও পরিণত হয়।
মা যেন একসাথে একটি গুপ্তচর ও সন্তান পালনকারী—জীবন যুদ্ধে একাই লড়াই করে যাচ্ছে।
পাঠকরা এই গল্পে দেখতে পান মা কিভাবে তার ছেলেকে বাস্তব থেকে বাঁচিয়ে রাখতে চায়, আর একই সঙ্গে নিজের মুক্তির জন্য সংগ্রাম করে। বইটি অনেক সংস্করণে প্রকাশিত হয়েছে এবং বিশ্বজুড়ে পাঠকরা এতে আবেগ ও থ্রিলার একসঙ্গে খুঁজে পান।

৪. Mothers: An Essay on Love and Cruelty – জ্যাকলিন রোজ

১৯৮৪ সালে প্রকাশিত এই বইটি একটু ভিন্ন রকম। এটা কোনো সাধারণ গল্প নয়, বরং একটা গভীর বিশ্লেষণ—মায়ের ভালোবাসা আর সন্ত্রাসের মাঝে সম্পর্কটা কেমন হতে পারে? জ্যাকলিন রোজ ব্রিটেনের একজন বিখ্যাত মনোবিজ্ঞানী এবং সাহিত্য সমালোচক।
তিনি এখানে দেখান কিভাবে মা-কন্যার সম্পর্ক কখনো কোমল, আবার কখনো তীব্র এবং কখনো নির্মম। শিক্ষাবিদরা ও গবেষকরা এই বইকে মাতৃত্বের মনস্তাত্ত্বিক দিক থেকে এক অমূল্য রচনা হিসেবে দেখে থাকেন।

৫. The Glass Castle – জ্যানেট ওয়ালস

জ্যানেট ওয়ালসের আত্মজীবনী ২০০৫ সালে বের হয়, যা পড়ে মনে হয়, “কি করে এক মা আর পিতা এত ভিন্ন হতে পারে একসাথে?” মা যে সন্তানদের প্রতি তার ভালোবাসা রেখে দিয়ে কেমন করে তাদের কঠোর বাস্তবের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে, সেই গল্প এখানে।
একটা ভঙ্গুর বাড়ি, এক মায়ের স্বপ্ন ও তার বাস্তবতার সংঘাত—এই বই পড়ে অনেকে নিজেকে উপলব্ধি

টোনি মরিসন, যিনি ১৯৯৩ সালে নোবেল পুরস্কার পান, তার ১৯৮৭ সালের এই বিখ্যাত উপন্যাসটি আফ্রিকান আমেরিকান গৃহশোষণের পরিপ্রেক্ষিতে লেখা।
মায়ের আত্মত্যাগ, অতীতের স্মৃতি আর প্রিয় সন্তানের প্রতি ভালবাসার থ্রিলার মিশ্রণ এখানে আছে।
বইটি বহুবার পুনঃমুদ্রিত হয়েছে এবং আজও পাঠকদের কাছে অন্যতম শ্রেষ্ঠ সাহিত্যকর্ম।

 ৬. Push – স্যাফায়ার

একটা মেয়ের কাহিনি, যাকে জীবন তার মায়ের কাছ থেকে ভয়ানক দুঃখ দিয়েছে। ১৯৯৬ সালে প্রকাশিত এই বইটি পড়ে যেকোনো পাঠক মনে করবে, মা-মেয়ের সম্পর্ক কিভাবে একদিকে ভালোবাসা আর অন্যদিকে যন্ত্রণার কারণ হতে পারে।
এই বইয়ের কাহিনি থেকে ২০০৯ সালে “ড্রাগডা” নামের সিনেমা তৈরি হয়, যা দারুণ প্রশংসা পায়।
বইয়ের ভাষা কঠিন, কিন্তু এর বার্তা স্পষ্ট—জীবনে যাই হোক, মা-মেয়ের বন্ধন ছিন্ন করা যায় না।

 

৭. Beloved – টোনি মরিসন

টোনি মরিসন, যিনি ১৯৯৩ সালে নোবেল পুরস্কার পান, তার ১৯৮৭ সালের এই বিখ্যাত উপন্যাসটি আফ্রিকান আমেরিকান গৃহশোষণের পরিপ্রেক্ষিতে লেখা।
মায়ের আত্মত্যাগ, অতীতের স্মৃতি আর প্রিয় সন্তানের প্রতি ভালবাসার থ্রিলার মিশ্রণ এখানে আছে।
বইটি বহুবার পুনঃমুদ্রিত হয়েছে এবং আজও পাঠকদের কাছে অন্যতম শ্রেষ্ঠ সাহিত্যকর্ম।

 

৮. Letter to My Mother – জর্জ সিমেনন 

বেলজিয়ামের এই বিখ্যাত রহস্য লেখকের লেখা একান্ত চিঠি, যেখানে মা ও সন্তানের সম্পর্কের নানা দিক তুলে ধরা হয়েছে।
এই চিঠিপত্র আকারের বইটি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সংস্করণে প্রকাশিত হয়েছে, যা সাধারণ পাঠক এবং সাহিত্যপ্রেমীদের কাছে সমানভাবে জনপ্রিয়।

৯. The Mothers – ব্রিট বেনেট

এটা মায়ের গল্প না, বরং মায়েদের নিয়ে এক গল্পের মেলা। ব্রিট বেনেট ২০১৬ সালে এই বই প্রকাশ করেন।
বইটি আধুনিক আমেরিকান সমাজের এক তরুণীর দৃষ্টিকোণ থেকে লেখা, যেখানে মা ও মেয়ের সম্পর্ক জটিল এবং নানা আবেগে ভরা।
বestseller হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সমালোচকদের কাছ থেকেও প্রশংসিত।

১০. Mom & Me & Mom – মায়া অ্যাঞ্জেলু

বিশ্বখ্যাত কবি ও লেখিকা মায়া অ্যাঞ্জেলুর এই আত্মজীবনী ২০১৩ সালে প্রকাশ পায়।
এই বইতে তিনি তার মায়ের সঙ্গে সম্পর্কের সূক্ষ্ম, মধুর ও জটিল দিক তুলে ধরেছেন।
একটা পরিবারের গল্পের মাধ্যমে তিনি দেখান মায়ের ভালোবাসা কত শক্তিশালী এবং ক্ষমার শক্তি কত বড়।
এটি পাঠক হৃদয়কে স্পর্শ করে। 

 

প্রত্যেক বইয়ের মধ্যে মায়ের বিভিন্ন দিক উঠে এসেছে: কারো গল্প তো গভীর আবেগময়, কারো থ্রিলারময়, আবার কারো মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণমূলক। তবে এসব বই একসাথে মায়ের জীবনের নানা রঙ দেখায়, যার মধ্যে ভালোবাসা, আত্মত্যাগ, লড়াই আর কখনো কখনো বেদনার ছোঁয়া লুকিয়ে থাকে। এই বইগুলো পড়লে আপনি শুধু একজন মায়ের গল্প নয়, বরং মানুষের জীবনের গল্প পাবেন।

মা — এই একটি শব্দের ভেতরেই লুকিয়ে আছে পুরো একটা জগত। তার ভালোবাসা কখনো দৃশ্যমান, আবার কখনো নিঃশব্দ ত্যাগে ভরা। উপরের বইগুলো শুধু কিছু গল্প নয়, বরং আমাদের জীবনের সবচেয়ে শক্তিশালী সম্পর্কের বিভিন্ন রূপ তুলে ধরে — ভালোবাসা, প্রতীক্ষা, যন্ত্রণা, সাহস আর নিঃস্বার্থ আত্মত্যাগের এক অপূর্ব চিত্র।

যে কেউ যদি মায়ের গল্প পড়ে একটু থমকে দাঁড়াতে চায়, হৃদয় দিয়ে অনুভব করতে চায় সেই অনন্ত ভালোবাসা, তাহলে এই বইগুলো হতে পারে তার জীবনের অন্যতম মূল্যবান পাঠ। আপনার পড়া বইগুলোর তালিকায় এই ‘মা’ সম্পর্কিত গল্পগুলো যদি না থাকে, আজই একটি তুলে নিন। প্রতিটা পাতায় হয়তো আপনি নিজের মায়ের মুখ খুঁজে পাবেন।

 

 

 

 


Tags

Post a Comment

0Comments

Post a Comment (0)